আপনি, আপনার জীবনসঙ্গী উভয়ই অজান্তে থ্যালাসেমিয়া বাহক হলে, পরবর্তী প্রজন্মে কি ঘটতে পারে!
থ্যালাসেমিয়া! বেশ পরিচিত একটা রোগ। আমাদের আশেপাশে এমনকিছু শিশু থাকে যাদের কিছু সময় পর পর ব্লাড নেওয়া লাগে। রোগটা সম্পর্কে সাধারণ তথ্যগুলো আমরা কমবেশি সবাই জানি। তাও প্রাথমিক কিছু কথাবার্তা তো না লিখলেই নয়!
থ্যালাসেমিয়া হলো উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত রক্তের একটি রোগ, যার কারণে শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে কম হিমোগ্লোবিন সৃষ্টি হয়। আর হিমোগ্লোবিন লাল রক্তকণিকাকে অক্সিজেন বহন করতে সাহায্য করে, তা তো আমরা জানি। তাই থ্যালাসেমিয়া যার আছে, তার সহজেই অ্যানিমিয়া হতে পারে। থ্যালাসেমিয়া অনেক রকমের হয়ে থাকে। প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ১ লক্ষ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এটি স্বল্প উন্নত দেশ যেমন নেপাল,বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে বেশি দেখা যায়। সাধারণ কথাবার্তা তো শেষ, তবে আজকে আমরা মূল যে বিষয়ে কথা বলবো তা হল- বাবা-মা উভয়ই যদি থ্যালাসেমিয়া বাহক বা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হন , তাহলে পরবর্তীতে তাদের সন্তানের মধ্যে কেমন প্রভাব পরতে পারে!
বিষয়টা জানার আগে আমাদের জানতে হবে থ্যালাসেমিয়ার কারণগুলো সম্পর্কে। থ্যালাসেমিয়া কোষের ডিএনএ-তে মিউটেশনের কারণে ঘটে যা হিমোগ্লোবিন তৈরি করে। থ্যালাসেমিয়ার সাথে সম্পর্কিত মিউটেশনগুলি পিতামাতার কাছ থেকে শিশুদের মধ্যে প্রেরিত হয়। হিমোগ্লোবিন অণুগুলি আলফা এবং বিটা চেইন নামক চেইন দিয়ে তৈরি, যা মিউটেশন দ্বারা প্রভাবিত হয়েই মূলত থ্যালাসেমিয়ায় সৃষ্টি হয়।
জিন আসে জোড়ায় জোড়ায়। আমরা মায়ের কাছ থেকে ১ সেট এবং বাবার কাছ থেকে ১ সেট জিন পেয়ে থাকি।প্রধান ধরনের থ্যালাসেমিয়া, অর্থাৎ বিটা থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করার জন্য, একটি শিশুকে তাদের পিতামাতার উভয়ের কাছ থেকে ত্রুটিপূর্ণ বিটা থ্যালাসেমিয়া জিনের একটি করে অনুলিপি পেতে হবে। এটি সাধারণত ঘটে যখন পিতামাতা উভয়ই ত্রুটিপূর্ণ জিনের বাহক হয় বা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়। আরেক ধরনের থ্যালাসেমিয়া হল আলফা থ্যালাসেমিয়া, এটি আরও জটিল কারণ এতে ৪টি সম্ভাব্য ত্রুটিপূর্ণ জিন জড়িত। আলফা থ্যালাসেমিয়া বৈশিষ্ট্যের বাহক পিতা-মাতার সন্তানরা থ্যালসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জন্মগ্রহণ করবে যদি তারা ত্রুটিপূর্ণ জিনের ৩ বা ৪টি কপি পায়। যে শিশুরা ১ বা ২ কপি পাবে, তারা বাহক হবে।
থ্যালাসেমিয়া বাহকদের নিজেদের থ্যালাসেমিয়া হয় না, তবে তাদের সঙ্গীও বাহক হলে তাদের থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি বাবা-মা উভয়েরই থ্যালাসেমিয়ার বৈশিষ্ট্য থাকে, তাহলে ৫০% সন্তান থ্যালাসেমিয়া বাহক, ২৫% সন্তান সম্পূর্ণ সুস্থ এবং ২৫% সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জন্মগ্রহণ করার সম্ভবনা রয়েছে। আরও সহজভাবে বলতে গেলে ৪ সন্তানের মধ্যে ২ সন্তান বাহক, ১ সন্তান সুস্থ এবং ১ সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জন্মগ্রহণ করার সম্ভবনা রয়েছে। তাহলে এখন উপায় কী?
বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়ার জন্য একটি সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে বাহক কিনা তা জানা যায়। যদি আপনি এবং আপনার জীবনসঙ্গী উভয়ই বাহক হন, তাইলে দুজনে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। দুই, বিয়েও করবেন এবং সন্তান নেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাইলে গর্ভাবস্থার প্রথম ১২ সপ্তাহের মধ্যে অ্যামনিওসেন্টেসিস নামক একটি পরীক্ষা করিয়ে দেখতে পারেন যে শিশুটি থ্যালাসেমিয়া দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে কিনা। এক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে নৈতিক দিকটাও বিবেচনা করতে হতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয় দুইজনেই বাহক, এমন অবস্থায় বিয়ে না করা, এতে আপনার সন্তান থ্যালাসেমিয়ার মতো অভিশপ্ত একটা রোগ থেকে মুক্তির সম্ভবনা অনেকাংশেই বেড়ে যাবে। শেষ কথা, রোগটা সম্পর্কে সচেতনতা সবচেয়ে বেশি দরকার।